আশিকুর রহমান শান্ত, ভোলা প্রতিনিধি||
ভোলায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হলেও পবিত্র রমজান শুরু হতেই অতি লাভের আশায় বাজারে আসতে থাকে অপরিপক্ক মৌসুমি এ তরমুজ। এ ফলনের প্রতি কমবেশি চাহিদা থাকায় প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা আকাশচুম্বী দর হাকালেও বেশী দরে অনিহা দেখা দেয় ক্রেতাদের মধ্যে। অপরদিকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে থাকে রসালো এ তরমুজের। দাম কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে চাষীরা। কোনো কোনো চাষী জমি থেকে তরমুজ উত্তোলন করে ক্রেতার অভাবে জমিতেই ফেলে রাখছেন। তরমুজ পেকে গেলেও অনেক চাষী জমি থেকে তা উত্তোলনই করছেনা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বিপরীতে চাষ হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ লাখ ৬২ হাজার টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার টন। গত বছর তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৮ টন।
সরজমিনে দেখা যায়, জেলার মোট উৎপাদিত তরমুজের প্রায় ৯০ ভাগই আসে চরফ্যাশন উপজেলা থেকে। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমেও চরফ্যাশনে তরমুজের প্রচুর আবাদ হয়েছে। সেখানকার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে নুরাবাদ, মজিবনগর, চরকলমী, আহম্মদপুর, নীলকমল, আবুবক্করপুর, রসুলপুরসহ আটটি ইউনিয়নে তরমুজের আবাদ হয়েছে বেশি।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের তরমুজচাষী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গেল বছরের তুলনায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার তরমুজও বিক্রি করতে পারিনি।’
ঢাকার কাওরান বাজার থেকে তরমুজ ক্রয় করতে আসা অধিকাংশ পাইকাররা সুলভমূল্যে তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকায়। জহিরুল ইসলাম নামের এক পাইকারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, চাষীদের কাছ থেকে পুরো ক্ষেতে তরমুজ ক্রয় করে তা ট্রাকে ঢাকার আড়তে নিয়ে বিক্রি করেন। তাতে করে ১০-১২ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৮০-১২০ টাকা। যদিও গেল বছর এই তরমুজ তাদের ক্রয় করতে হয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়। এ বছর ভোলার অধিকাংশ চাষীরাই তরমুজ আবাদে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, ‘এবার ভোলায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৫২ টন। এখানকার তরমুজ সারা দেশে জনপ্রিয়। এখান থেকে ফেরি, লঞ্চ ও ট্রলারে করে বিপুল পরিমাণ তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এ বছরের শুরুর দিকে চাষীরা তরমুজের দাম ভালো পেয়েছেন। তবে মাঝামাঝি সময়ের দিকে হঠাৎ করে ক্রেতা না থাকায় বাজার দর কমে গিয়ে কোনো কোনো চাষী বিপাকেই পড়েছেন। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা তাদের।
You cannot copy content of this page