এইচ এম নাহিদ ৷৷
ভোলায় ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। শহর রক্ষা বাঁধ ধসে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গাছ চাপা’য় মারা গেছেন পাঁচ জন। ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপূর, চটকিমারা, মাঝেরচর, বোরহানউদ্দিেিনর মদনপূর, নেয়ামতপূর, চরফ্যাশনের ঢালচর, চরকুকরি মুকরি ও মনপুরা সহ অনেক এলাকায় বন্যার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে মানেবতর জীবন যাপন করছেন। পর্যাপ্ত ত্রান এখনো পৌছেনি এসব দুর্গত এলাকায়। এছাড়াও ঘূর্ণিঝর রিমালের প্রভাবে ভোলার ২০ লক্ষ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলা উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধ, ফসলের মাঠ, পুকুরের মাছ, গোয়ালের গবাদিপশু, পানিতে তলিয়ে গেছে বহু শিক্ষালয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাঝির হাট এলাকার তোফাজ্জল হাজারির ছেলে ওমর ফারুক (৪০) সোমবার বিকাল ৫ টার সময় বসত ঘরে গাছ চাপায় মারাযান। ভোলার দৌলতখাঁনে ঘরের ভেতর গাছ চাপা পড়ে মাইশা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চরপাতা ইউনিয়নের কাশেম নামের যুবক ঘর চাপায় নিহত হয়। সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাইশা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনির হোসেনের মেয়ে। শিশুর বাবা মনির জানান, রবিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ একটি গাছ আমার ঘরের ওপর চাপা দেয়। এতে টিনের চাল আমাদের ওপর চাপা পড়লে মাইশা মারা যায়। আমিও চাপা পড়েছিলাম, স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করেছে।
এর আগে, ভোরে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে লালমোহনের চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, মনেজা খাতুন গতকাল রাতে তার এক নাতিকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে ঝরোবাতাসে তার বসত ঘরের উপর গাছ উপরে পরলে ঘটনা স্থলেই মনেজা খাতুন মারা গেলেও অক্ষত আছে তার নাতি। বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পঞ্চায়েত বাড়ির জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত (৪৮)’ পথ চলার সময়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে পেটের মধ্যে ঢুকে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রান কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। তিনি আরো জানান, ঝড়ো বাতাসের কারনে এখন সব দিক থেকে খবর নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ঝড় থেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে, ঝড় – বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রতিটি উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধ, ফসলের মাঠ, পুকুরের মাছ, গোয়ালের গবাদিপশু ভেসে গেছে। মনপুরা উপজেলা হাজির হাটের ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, হাজিরহাটের পূর্ব পাশে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার জন্য বলা হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের ঢালচর ও চরনিজামে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এ কারণে বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে, গবাদিপশু রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে। ঢালচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম জানান, সকালের জোয়ারে ইউনিয়নের সব এলাকা পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই পানি কমতে না কমতে আবার রাতের জোয়ার আসবে। এখানে প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশসহ ইউপি সদস্যদের মানুষের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ভোলা সদর, মনপুরা, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে অচিরেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত ও সংরক্ষেনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য আমরা জেলা প্রশাসন সবধরনের সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো বলে জানান তিনি।
You cannot copy content of this page