সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিখোঁজ শিশু’কে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশ দৈনিক আমার দেশ’কে ভোলার রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের অভিনন্দন সা’দপন্থীদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবিতে ভোলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা ভোলায় বাবা-ছেলে আগ্নেয়াস্ত্র সহ কোস্টগার্ডের হাতে আটক ভোলায় ইটভাটা মালিক সমিতির ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন আজ ১০ই ডিসেম্বর’ ভোলা পাক’হানাদার মুক্ত দিবস আজ ১০ ডিসেম্বর, ভোলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস ভোলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গনঅধিকার পরিষদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি ভোলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ভোলার ভেলুমিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন জেলা পুলিশ সুপার

ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার ৫.১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৭৭ বার পঠিত

ভোলা জার্নাল রিপোর্ট।। 

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলায় আবারো ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার বাজার মুল্য সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। তথ্য বলছে, এক টিসিএফ গ্যাস দিয়ে দেশের এক বছরের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাহলে এই পুরো গ্যাসে বাংলাদেশ চলতে পারবে আরো অন্তত পাঁচ বছর।

জানা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর ও ইলিশায় ২.৪২৩ টিসিএফ এবং চরফ্যাশনে ২.৬৮৬ টিসিএফ মজুদ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ এখন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করছে। স্পট মার্কেটে (খোলাবাজার) প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দর ১০.৪৬ মার্কিন ডলার, সেই হিসাবে ৫.১০৯ টিসিএফ গ্যাসের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ছয় লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম চার বছর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে এই মজুদ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। গবেষণাটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুনে শেষ হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সে জমা দেয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর থেকে ইলিশা পর্যন্ত ৬০০ বর্গকিলোমিটার থ্রিডি সিসমিক সার্ভে করা হয়েছে। এতে ২.৪২৩ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। ভোলার চরফ্যাশনে ১৫২.৬ লাইন কিলোমিটার টুডি সিসমিক সার্ভে করে ২.৬৮৬ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে।

গ্যাজপ্রমের মুখপাত্র এলেক্সি বেলবেজিয়াভ গণমাধ্যমকে বলেন, এই গবেষণাটি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে সিসমিক ডাটা, অয়েল লক ডাটা, কোর ডাটা বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার, সুপার কম্পিউটার সিস্টেম এবং উন্নত মানের ল্যাব ব্যবহার করার ফলে গবেষণার তথ্যগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য। যার ওপর ভিত্তি করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ভোলা এলাকা আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। গবেষণার প্রতিবেদন ধরে আমাদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসতে ভোলা থেকে বরিশাল, বরিশাল থেকে খুলনা গ্যাস পাইপলাইন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলএনজি ও সিএনজির মাধ্যমে ঢাকায় আনা হবে। শিগগিরই এটির একটি টেন্ডার দেয়া হবে। এখন থেকে সব কাজ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হবে। একাধিক কম্পানিকে কাজের সুযোগ দেয়া হবে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি সীমিত করে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমানে ভোলায় পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। আরো চারটি কূপ খনন করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকেও দৈনিক আরো ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। আরো পাঁচটি কূপের প্রস্তাবনা দেয়া আছে, সেখান থেকেও আগামী দুই বছরের মধ্যে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া আরো ১৪টি কূপের স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে আরো ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। চরফ্যাশনে ছয়টি জিওলজিক্যাল ভূতাত্ত্বিক কাঠামো শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে ৩০টি কূপ খনন করা যেতে পারে। এই কূপগুলো থেকে দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। ভোলার এই কূপগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৯২০ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা যাবে। এতে একদিকে দেশের গ্যাস সংকট দূর হবে, অন্যদিকে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির নির্ভরতাও কমবে। এই গ্যাস দিয়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, আমাদের ভোলা ও সিলেট এ দুটি এলাকা খুবই সম্ভাবনাময়। এই দুটি এলাকাকে গ্যাসের প্রমাণিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোলায় কূপ খননের কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিদেশি কম্পানিকে বাদ দিয়ে শুধু বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম চালানো ঠিক হবে না। কারণ বাপেক্সের সেই সক্ষমতা তৈরি হয়নি। তাই পেট্রোবাংলা ও বিদেশি কম্পানিগুলো যৌথভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে পারে। তাহলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব হবে।

পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, গ্যাজপ্রম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলনের কূপ খননের কাজ করছে। কম্পানিটি এরই মধ্যে ২০টি কূপ সফলভাবে খনন করেছে এবং প্রতিটি কূপে গ্যাস পেয়েছে। গ্যাজপ্রমের কূপগুলো প্রায় ৪.৫ টিসিএফ গ্যাসের রিজার্ভ বাড়িয়েছে। গ্যাজপ্রমের কূপগুলো থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

গ্যাজপ্রমের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল তাদের কার্যকর ও দক্ষ কূপ নির্মাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ল্যাব, সফটওয়্যার ও প্রকৌশলীকে ব্যবহার করে কূপ খনন করার ফলে তাদের উত্তোলন অনেক বেশি হয়। বাংলাদেশে গ্যাজপ্রম ২০টি কূপ খনন করেছে, সব কূপে গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বর্তমানে এই কূপগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অনভিজ্ঞ কোম্পানি দিয়ে কূপ খনন করা হলে গ্যাস ফিল্ডগুলো হুমকির মুখে পড়ে। শেভরন ও শেলের চেয়ে গ্যাজপ্রমের কূপ খনন খরচ তুলনামূলক কম হয় বলে জানান গ্যাজপ্রমের কর্মকর্তারা।

পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি থাকছে এক হাজার ৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। স্বাভাবিক সময়ে দুটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি রূপান্তরের মাধ্যমে এক হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতো। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সামিটের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কম হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প-কারখানাসহ সব খাতেই গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে।

 

 

 

 

Sue:BV/24

Facebook Comments Box
এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

You cannot copy content of this page