বরিশাল বিভাগের ভোলা’সহ ছয় জেলায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে তীব্র গরমে ভোগান্তিতে আছেন এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ গ্রাহক। শহরের চেয়ে গ্রামের গ্রাহকেরা বেশি ভোগান্তিতে আছেন। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় এমন সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, কেন্দ্রটির সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মণি জিকো। এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (ওজোপাডিকো) এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভাগের ৬ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন ৪ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে বরিশাল নগরে রয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার। উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। পবিসের আওতায় গ্রাহক আছেন প্রায় ২১ লাখ ৬৫ হাজার। দক্ষিণ বরগুনার বাসিন্দা ও ওজোপাডিকোর গ্রাহক মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার থেকে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। রাতেও একই অবস্থা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালে জরুরি রোগীদের অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। ওজোপাডিকোর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের ১৮ হাজার গ্রাহকের জন্য এখানে চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৪ মেগাওয়াট। সরবরাহে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, আগামী রোববার থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। বরিশাল বোর্ডের অধীন এ বছর ৬ জেলায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৬৬ হাজার ৫৬২ জন শিক্ষার্থী। বোর্ডের ১৩৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৩৪১টি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে নগরের বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, কয়েক দিন ধরে দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকা এবং প্রস্তুতি ব্যাহত হওয়ায় মানসিক চাপে আছে শিক্ষার্থীরা। ওজোপাডিকো বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল মজিদ আমাদের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াটে। সেখানে পাচ্ছি ৭০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দিয়ে তা ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
একইভাবে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলাতেও অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থা ঠিক হতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে শিশু, বায়োবৃদ্ধ সহ কেউ ঘুমাতে পারছেনা – ঘুমানো যাচ্ছে না। দিনে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও বিসিক শিল্পনগরে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ জেলার অন্যন্য উপজেলা গুলোতে আরও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। পুরো ভোলা জেলায় দিনরাতে ৮-১০ বারের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এছারাও উপজেলাগুলোতে চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভোলায় ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সহ মিলিয়ে ১৩০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৯৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ওজোপাডিকোর চাহিদা ভোলা সদরে ২২ মেগাওয়াট। ফলে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের মোট এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওজোপাডিকো ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফ বলেন, আমরা আগে কুইক রেন্টাল থেকে ৪০ এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার ২২৫ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম। কিন্তু কুইক রেন্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। ফলে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। বাংলাদেশ-চায়না বিদ্যুৎ কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২২ সালের মার্চে উৎপাদনে যায়। গতকাল বুধবার থেকে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থায়। জানতে চাইলে কেন্দ্রটির সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মণি জিকো সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি বড় প্রকল্প। এই প্ল্যান্টের উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। এ জন্য গতকাল থেকে এই প্ল্যান্টের ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পায়রার সব ঠিক হতে সর্বোচ্চ একসপ্তাহ লাগতে পারে। আবার তার কিছুদিন আগেও চালু হতে পারে বলে জানান তিনি।
Sue-PTMA/N/BJ
You cannot copy content of this page