আশিকুর রহমান শান্ত ||
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় বিচার প্রার্থী এক ভিকটিম কিশোরীকে ২২ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করার সময় শারীরিক ভাবে নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে চরফ্যাশন আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান এর বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে আদালত চলাকালীন সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের খাস কামরায় এই ঘটনা ঘটে। ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ভোলায় গত ১৪/৩/২০২৪ ইং তারিখে চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নজর আলী মাঝি বাড়ির বাসিন্দা মৃত জয়নাল আবেদীন এর মেয়ে মাইমুনা আক্তার লামিয়াকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে তার ভাই মোঃ শাহিন ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন অভিযুক্ত রিপন ও রুবেল এর বিরুদ্ধে। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহন করে ওসি শশিভূষণ কে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওসি শশিভূষণ থানার এসআই গাফফার কে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেন। যার মামলা নং জিআর ৩/২৪ । এসআই গাফফার ভিকটিমের ২২ ধারা জবানবন্দী গ্রহনের জন্য গত ১৬ এপ্রিল চরফ্যাশন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের বিচারক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে প্রেরন করে। চরফ্যাশন আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ভিকটিম মাইমুনা আক্তার লামিয়ার ২২ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করার জন্য তার খাস কামরায় ডাকেন। সেখানে ভিকটিমের জবানবন্দী গ্রহণ করার সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান অশ্লীল ভাষায় নানা ধরনের কথাবার্তা বলেন এবং ফ্যানের সাথে টানিয়ে বেত দিয়ে মারধর ও তার বাবা মাকে আটকে রেখে তাকে জেলে রাখার হুমকি দেয়। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি ম্যাজিস্ট্রেট, এক পর্যায়ে ভিকটিম এর গালে চড় মেরে বসেন। দীর্ঘ এক ঘন্টা পর ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেট এর খাস কামরা থেকে বের হয়ে আদালত প্রাঙ্গণে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে ওঠেন মামলার ভিকটিম। তার কান্নাকাটিতে তার পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসলে পরিবারের সদস্যদেরকে উক্ত ঘটনার বিবরণ দিলে তারা সেখানে এ ঘটনার বিচার দাবী করেন। একপর্যায়ে চরফ্যাশন আদালত প্রাঙ্গনে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে পরিবেশ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন, অ্যাডভোকেট লিটন তাকে জানিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার ভিকটিমকে থাপ্পর মারার ঘটনা ঘটেছে।
এবিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত ঘটনা শুনে আমি উকিল লাইব্রেরীতে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনাটি জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মেয়েটিকে না পাওয়ায় আমি তার বক্তব্য জানতে পারিনি।
এবিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী অফিসার নওরীন হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে খবর পাই আদালত প্রাঙ্গনে হট্টগোল হচ্ছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমিও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে হট্টগোল মীমাংসা করার চেষ্টা করি।
এ ব্যাপারে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন আমি ছুটিতে আছি, আপনার কিছু জানার থাকলে আমার অফিসে যোগাযোগ করুন বলে কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
You cannot copy content of this page