ওমর ফারুক।।
ভোলার ৭ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপরে পড়েছে গাছপালা, বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর, পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের কোটি কোটি টাকার মাছ। ঘর ও গাছচাপা পড়ে প্রাণ গেছে ৩ জনের। বসতঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে অনেক পরিবার। ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে জেলার ৬০টি ইউনিয়নকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৩টি ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবিএম আকরাম হোসেন জানান, বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজার ৬২৩টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক ৫ হাজার ১৫৮টি ও ২ হাজার ৪৬৫টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, জেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ২৫ হাজার ৮১৫ টন আউশ বীজতলা ও আউশ আবাদসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ৫১ শতাংশ ধান ও বিভিন্ন মৌসুমি ফসল পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪৮ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলা সদর, দৌলতখান ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। নদীর ঢেউ ও পানির স্রোতে ভেঙে গিয়ে বৃহৎ এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ওই এলাকা গুলোতে জরুরি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হলেও ৪ বছর আগে ব্লক স্থাপনের টেন্ডারের কাজ আজও করা হয়নি।
এই বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, আপাতত বেড়িবাঁধ ভাঙার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ওই এলাকার ব্লকের কাজটি চলমান রয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি জানান।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, জেলায় প্রায় ৯৫ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৫০টি মাছের ঘের ও ৬০০ হেক্টর জমিতে থাকা ৫ হাজার ৮৬০টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। যার মূল্য ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পানিতে ভেসে গেছে এবং প্রায় দুই কোটি টাকার অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও লালমোহনে ঘরচাপায় ও গাছের চাপায় নিহত হয়েছে ৩ জন। নিহতরা হলেন, দৌলতখান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মনিরের মেয়ে মাইশা (৪), বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর (৫০) এবং ঘরের নিচে চাপা পড়ে লালমোহন উপজেলার চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মনেজা খাতুন (৫০)।
ভোলা ওয়েস্টার্ন পাওয়ার প্লান্ট ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট ঘটেছে। সচল করতে আমরা একটানা কাজ করছি।তবে শহরের কিছু কিছু এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
You cannot copy content of this page